তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো এখন ‘কসাইখানায়’ পরিণত হয়েছে, যেখানে ক্লান্ত-ক্ষুধার্ত মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ইস্তাম্বুলে এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে এরদোগান এই ঘটনাগুলোকে ‘মানবতার ধ্বংস’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
এরদোগান বলেন, ‘যেসব দৃশ্য আমরা কেবল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে দেখার কথা ভাবি, সেগুলো এখন গাজায় বাস্তব হয়ে উঠেছে, তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার চোখের সামনে।’
এরদোগান ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নিপীড়নকে গত শতাব্দীর সবচেয়ে নির্মম গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায় শুধু শিশু নয়, মানবতার প্রতীক হয়ে থাকা সব কিছুই ধ্বংস করে দিচ্ছে এমন একদল খুনি, যারা নিরপরাধ মানুষের রক্ত পান করে বেঁচে থাকে।’
এরদোগান আরও বলেন, ‘খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর মতো জায়গাগুলোকে এখন কসাইখানায় পরিণত করা হয়েছে। সেখানে গাজার মুসলমানরা ক্লান্তিতে লুটিয়ে পড়ছে, আর সঙ্গে সঙ্গে তারা হয়ে উঠছে বেঈমান গুলির লক্ষ্যবস্তু। মায়েরা এক বস্তা আটা বা এক চুমুক পানির জন্য জীবন বাজি রাখছেন।’
তিনি এসব মন্তব্য করেছেন এমন সময়, যখন ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে একাধিকবার গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এরদোগান বলেন, ‘আমরা গাজার ভাই-বোনদের এক মুহূর্তের জন্যও একা রাখিনি। আমরা ১ লাখ ১ হাজার টনের বেশি মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছি। আমরা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণ বাণিজ্য বন্ধ করেছি। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমেও গাজার পাশে থেকেছি।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যারা ইসরাইলকে খুশি করতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ বলে, তাদের মতো করে আমরা পেছনে হটিনি। গাজার বীর সন্তানদের থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে গোপনে এবং প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছে। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া থেকে সরে আসিনি।’
ভবিষ্যতের জন্য আশার কথা জানিয়ে এরদোগান বলেন, ‘যখন সেই বরকতময় দিন আসবে, ইনশাআল্লাহ আমরা সেখানে থাকব। আমরা সেখানে থাকব—ন্যায়বিচারের পক্ষে কঠিন সময়ে কথা বলার গর্ব নিয়ে। আমরা থাকব—অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সম্মান নিয়ে। আমরা থাকব—অত্যাচারিতের পাশে থাকার মর্যাদা নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের গাজার ভাইদের ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরব, এবং একসাথে কৃতজ্ঞতার সাথে নামাজ আদায় করব।’
এরদোগান শেষ করেছেন এই প্রত্যাশায়, ‘যেমনটা আমরা সিরিয়ায় নিপীড়নের অবসান দেখেছি, তেমনই গাজায়ও একদিন এই যন্ত্রণার শেষ হবে। আমরা অবশ্যই সেই সুন্দর দিনগুলোর দেখা পাব, যখন শুধু ফিলিস্তিন থাকবে—তার পূর্ণ গৌরব নিয়ে।’
ঊষার আলো-এসএ