বাড়তি শুল্কের বোঝা শুধুই কি ভোক্তা বহন করবে, নাকি আমদানিকারকের দায়বদ্ধতা আছে-এ বিষয়ে এখনই যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও বায়ারদের সঙ্গে পোশাকশিল্পের মালিকদের আলোচনায় বসা উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ। তা না হলে চাহিদা কমে নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, এই প্রাপ্তিকে (২০ শতাংশে নেমে আসা) স্বাগত জানাই। কেননা, দীর্ঘ ২ মাস আলোচনা করে আমরা শুধু ২ শতাংশ শুল্ক কমাতে সক্ষম হয়েছিলাম, যা ব্যাপক উদ্বেগ ও ঝুঁকির সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে টিম আলোচনার মাধ্যম ২০ শতাংশে কমিয়ে আনতে পেরেছে। এক্ষেত্রে নেগোসিয়েশন টিমের প্রস্তুতি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তিনি বলেন, ২০ শতাংশ শুল্ক ভালো না খারাপ-এখন এটা আলোচ্য বিষয়। যদি শুরুর দিকের ৩৭ শতাংশ শুল্ক ভিত্তি ধরা হয়, তাহলে ২০ শতাংশ শুল্ক ভালো। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওভেন খাতে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত এবং ডেনিমে পাকিস্তান। এই সব দেশেরই শুল্কহার কাছাকাছি। তুলনামূলক বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য অসুবিধাজনক কিছু হয়নি। কারণ, ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, ভিয়েতনাম বাংলাদেশের সমান। আর কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের এক শতাংশ কম। সুতরাং বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলার তুলনায় প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। তবে এই প্রাপ্তিতে একেবারে খুশি হওয়া বা হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ, স্থানীয়ভাবে ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের একটা শর্ত ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম। এটি এখন বাংলাদেশের জন্য বড় ব্যাপার। কারণ, ওভেন খাতে বাংলাদেশ ৪০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করে না এবং যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশই ওভেন খাতের। সুতরাং সেই জায়গায় আমরা কোনো অসুবিধায় পড়ব কি না, এটি আরও একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের আমদানির ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যয়কে কীভাবে সমন্বয় করবে, সেটা বড় ব্যাপার। যদি ভোক্তার ওপর পুরো শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে চাহিদা কমে যাবে। চাহিদা কমে গেলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যাবে। সুতরাং বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের এখনই বিদেশি ক্রেতা, আমদানিকারক ও ব্র্যান্ডের সঙ্গে কৌশলী আলোচনায় বসতে হবে। যাতে ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্কের বোঝা সবাই বহন করে।
গোপনীয় শর্ত প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে মাশরুর রিয়াজ বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সরকার নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারে। কারণ, এই চুক্তির ভেতরে জাতীয় স্বার্থ বা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিষয় আছে কি না, তা জনগণের জানা দরকার।
ঊষার আলো-এসএ